লেবাননের যুদ্ধাঞ্চল থেকে সরিয়ে নেওয়া ৫৪ বাংলাদেশি নাগরিকের প্রথম ব্যাচ আজ সন্ধ্যায় একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইটে ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে।পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা আজ সকালে বাসসকে নিশ্চিত করেন যে ২৬ পুরুষ, ২০ নারী, ছয় শিশু এবং দুই নবজাতকসহ মোট ৫৪ জনের এই দলটি জেদ্দায় ট্রানজিট বিরতির পর আজ সন্ধ্যা ৬টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে।তারা স্থানীয় সময় রোববার রাত ১০টা ৫০ মিনিটে বৈরুত থেকে রওনা হয় এবং আজ সকাল স্থানীয় সময় ৮টা ২০ মিনিটে জেদ্দায় পৌঁছে। ফ্লাইটটি জেদ্দা থেকে স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ২০ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা হওয়ার কথা রয়েছে।পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এর আগে গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, সরকার লেবানন থেকে নথিভুক্ত বাংলাদেশি নাগরিকদের প্রত্যাবাসন শুরু করেছে। তিনি উল্লেখ করেন যে বৈরুত থেকে বহির্গামী ফ্লাইটে পর্যাপ্ত আসন না পাওয়ায় প্রাথমিক পর্যায়ে সীমিত সংখ্যক প্রবাসীকে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘সামর্থ্যের সীমাবদ্ধতার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা একটি বড় দলকে সমুদ্রপথে তুরস্কে পাঠানোর বিকল্প অন্বেষণ করছি। সেখান থেকে তারা বিমানে করে বাংলাদেশে ফিরতে পারবেন।লেবাননে চলমান সংঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশিদের নিরাপদে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম)-এর সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে প্রত্যাবাসন প্রচেষ্টা সমন্বয় করা হচ্ছে।লেবাননে আনুমানিক ৭০ হাজার থেকে একলাখ বাংলাদেশি নাগরিক রয়েছেন। তবে এর মধ্যে প্রায় ১৮ শ’ জন দেশে ফেরার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।এর মধ্যে প্রায় ১৬০ জনের প্রত্যাবাসনের জন্য প্রয়োজনীয় আইনি নথিপত্র রয়েছে।পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, বহির্গমনের ছাড়পত্র পেতে এবং সংশ্লিষ্ট ফি প্রদান করতে প্রয়োজনীয় সঠিক নথিপত্রের অভাবে অনেকের জন্য প্রক্রিয়াটি জটিল হবে।লেবাননে আটকে পড়া বাংলাদেশি নাগরিকদের ফিরিয়ে আনার সুবিধার্থে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে।
এর আগে, লেবাননে বাংলাদেশ দূতাবাস আগ্রহী নাগরিকদের প্রত্যাবাসনের জন্য তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত করে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে।
ইসরাইলের হামলায় বিপর্যস্ত লেবানন থেকে প্রথম দফায় ফেরত এসেছেন ৫৪ জন বাংলাদেশি। সোমবার সন্ধ্যায় জেদ্দা থেকে সৌদি এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে দেশে ফেরেন তারা। এসময় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাদের খোঁজ-খবর নেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।এসময় তিনি বলেন, আমি লেবাননের বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি, কারণ ফিরে যারা আসছেন তারা দূতাবাসের প্রশংসা করছেন। উনারা সেখানে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে দিন-রাত কাজ করছেন।সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, আমরা দেখবো ফিরে যারা আসছেন তাদের পুনর্বাসন করা যায় কিনা। লেবাননের পরিস্থিতি ঠিক হলে উনারা আবার যাবেন। আমরা এখানে উনাদেরকে ছেড়ে দেবো না। আমরা দেশে অথবা বিদেশে পুনর্বাসনের চেষ্টা করবো।
আসিফ নজরুল বলেন, রেমিট্যান্সযোদ্ধা যারা দেশে আসছেন আমরা তাদেরকে ভিআইপি সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করছি। প্রবাসীদের এই সেবা দিতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অচিরেই আমরা প্রবাসীদের জন্য লাউঞ্জ তৈরি করছি, দুই সপ্তাহের মতো লাগবে। আমরা আশা করি বড় অনুষ্ঠান করে উদ্বোধন করতে পারবো। আমাদের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের স্বপ্ন, প্রবাসীরা যেন ভিআইপি ট্রিটমেন্ট পায়।এরআগে, গতকাল স্থানীয় সময় রাত ১১টার কিছু আগে লেবাননের রাষ্ট্রীয় সংস্থা মিডল ইস্ট এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে রওনা হন ৫৪ জন বাংলাদেশি। দূতাবাসের ব্যবস্থাপনায় তাদেরকে বৈরুতের রফিক হারিরি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি বাসে করে নিয়ে যাওয়া হয়।আসিফ নজরুল জানান, লেবাননে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনতে যত টাকা
প্রয়োজন খরচ করা হবে। আইওএম-এর সহায়তায় আমরা সবাইকেই বিনা খরচে নিয়ে আসবো।এদিকে রবিবার রাতে বৈরুতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস জানায়, দ্বিতীয় ফ্লাইটে ৬৩ জন সিরিয়ালধারী এবং তাদের শিশু সন্তানসহ মোট ৬৫ জনের দ্বিতীয় ফ্লাইট বৈরুত হতে জেদ্দা হয়ে ঢাকার উদ্দেশে বিমানযোগে রওনা করবেন। আগামী মঙ্গলবার স্থানীয় সময় রাত ১০টা ৫০ মিনিটে ফ্লাইট ছেড়ে যাওয়ার কথা রয়েছে। দূতাবাস জানায়, লেবাননে চলমান যুদ্ধপরিস্থিতির কারণে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে যারা স্বেচ্ছায় দেশে যেতে দূতাবাস বরাবর আবেদন করেছেন এবং যাদের পাসপোর্ট, আকামাসহ আবশ্যক ট্রাভেল ডকুমেন্টস প্রস্তুত রয়েছে, তাদের যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে দূতাবাসের ব্যবস্থাপনায় দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।