অবশেষে দ্বিতীয় দফায় আর রক্ষা পেলেন না দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল। কাতারভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরা ও বিবিসির লাইভ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পার্লামেন্টে ইওলকে অভিশংসিত করা হয়েছে।
এর ফলে তাকে এখনই ক্ষমতা হারাতে হচ্ছে না। অভিশংসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে কয়েক সপ্তাহ সময় নেয়। পার্লামেন্টে পাস হওয়া অভিশংসন প্রস্তাব এখন চলে যাবে সরাসরি সাংবিধানিক আদালতে। তাতে আছেন ৯ জন সদস্য। যদি অভিশংসন প্রস্তাব বহাল রাখার পক্ষে তার মধ্যে ৬ জন মত বা ভোট দেন, তবেই প্রেসিডেন্ট তার ক্ষমতা হারাবেন। যদি প্রেসিডেন্ট ক্ষমতা হারান তাহলে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে হবে ৬০ দিন বা দুই মাসের মধ্যে।অভিশংসন প্রস্তাব পাস হওয়ার পর বিরোধী শিবিরে আনন্দের বিস্ফোরণ দেখা দিয়েছে। প্রস্তাবের ওপর ভোট হওয়ার পর পার্লামেন্টের স্পিকার উ ওন-শিক বুক ফুলিয়ে ঘোষণায় বলেছেন, প্রস্তাবের পক্ষে ভোট পড়েছে মোট ২০৪টি। বিপক্ষে ভোট পড়েছে ৮৫টি। ভোটদানে বিরত ছিলেন তিনজন এমপি। ৩০০ এমপির মধ্যে এই ভোট হলে আটটি ভোটকে বাতিল করা হয়েছে। এই ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, অভিশংসন প্রস্তাব পাস হয়েছে। একই সঙ্গে পার্লামেন্ট অধিবেশনের সমাপ্তি ঘোষণা করেন তিনি। স্পিকার আরও বলেন, আমরা আশা করি বছর শেষে জনগণ কিছুটা আনন্দ পেয়েছে। বছর শেষের দিকে যে উৎসব বাতিল করা হয়েছিল, সেই উৎসব আবার শুরু হবে।
তিনি আরও বলেন, কোরিয়ার ভবিষ্যত এবং আমাদের আশা আমরা মনে করি জনগণের হাতে। তাই আমাদের প্রত্যাশা অনেক শক্তিশালী। আপনাদেরকে ধন্যবাদ। এ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে বিরোধী শিবিরে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়।অন্যদিকে রাজধানী সিউলের এক অংশে প্রেসিডেন্ট ইউনের সমর্থনে তার সমর্থকরা র্যালি করছিলেন। তারাও উৎসবের আমেজে ছিলেন। স্পিকারের ঘোষণার পর তা যেন মুহূর্তেই ফুটো বেলুনের মতো চুপসে যায়। বিবিসির সাংবাদিক রিচার্ড কিম বলেন, পার্লামেন্টে প্রস্তাবের পক্ষে ভোটের ফল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে বিরোধী ডেমোক্রেট পার্টিতে আনন্দ যেন বিস্ফোরণের মতো ছড়িয়ে পড়ে। রায় ঘোষণার পর পরই পার্লামেন্ট থেকে নীরবে বেরিয়ে যান ক্ষমতাসীন দলের এমপিরা। এর আগে ভোট গণনার সময় এ দলের কিছু এমপিকে দু’হাত তুলে প্রার্থনা করতে দেখা যায়।
উল্লেখ্য, গত শনিবার রাজনৈতিক কৌশলে অভিশংসন প্রক্রিয়া থেকে রেহাই পাওয়ার পর আজ আবার তার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় দফা অভিশংসন প্রস্তাবে ভোট হয়। গত সপ্তাহে প্রথম দফা প্রস্তাবের ওপর ভোট হওয়ার আগেই প্রেসিডেন্টের নিজের দল ডেমাক্রেটিক পার্টির এমপিরা পার্লামেন্ট থেকে ওয়াকআউট করেন। ফলে ব্যর্থ হয় সে উদ্যোগ। এরপর তিনি যেন দেশ ছেড়ে যেতে না পারেন সেজন্য তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। অভিশংসন প্রস্তাব পাস হতে হলে প্রেসিডেন্ট ইউনের দলের কমপক্ষে আট জন সদস্যের সমর্থন প্রয়োজন। তাহলেই বিরোধীরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু প্রথম দফায় সুযোগ নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর আজ আবার প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। অন্যদিকে সামরিক শাসন জারি করার পর ভয়াবহ চাপের মুখে ক্ষমতা কোনোমতে ধরে রেখেছেন প্রেসিডেন্ট ইউন। রাজধানী সিউলে অবস্থিত পার্লামেন্টের বাইরে এদিন হাজার হাজার মানুষ সমবেত হন। তারা দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করে, নেচে, গেয়ে দিনটি উদযাপন করছেন। রাজধানীর অন্য অংশে গোয়াংহোয়ামুনে অবস্থান করছিলেন প্রেসিডেন্ট ইউনের সমর্থকরা। তারা তাদের নেতাকে ক্ষমতায় ধরে রাখার পক্ষে র্যালি করে। কিন্তু তা আর হলো না। তাদের আনন্দ হঠাৎই হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে।