ধামরাই (ঢাকা) প্রতিনিধি: ঢাকার ধামরাইয়ে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অমান্য করে মোটরসাইকেল শোডাউন করেছেন আমতা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম খান লাবু। কেন্দ্রীয় নির্দেশনার ৭৭ দিন পার হলেও ইউনিয়ন বিএনপির এই সভাপতি জানেনই না মোটরসাইকেল বা যে কোন গাড়ি বহর নিয়ে শোডাউন দেয়া কেন্দ্রীয়ভাবে নিষেধ করা হয়েছে। এর আগেও দলীও শৃঙ্খলা অমান্য করে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচন করার অভিযোগও রয়েছে এই নেতার বিরুদ্ধে।
শনিবার (২৩ নভেম্বর) মনিরুল ইসলাম লাবুর শতাধিক মোটরসাইকেল শোডাউনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পরে। তার পর থেকেই এবিষয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঝে নির্দেশনা অমান্য করার গুঞ্জন উঠে। এর আগে শুক্রবার (২২ নভেম্বর) জুম্মা নামাজের পর শতাধিক মোটরসাইকেল নিয়ে আমতা ইউনিয়নের বড় নারায়নপুর ফাসি মার্কেট থেকে এই শোডাউন শুরু হয়।
পরে পুরা আমতা ইউনিয়নে এই মোটরসাইকেল শোডাউন দেয়া হয়।
এসময় ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ জায়গা গুলোতে মোটরসাইকেল থামিয়ে বক্তব্য দেয় লাবু। পরে আবার বড় নারায়নপুর ফাসি মার্কেটে গিয়ে শোডাউনটি শেষ হয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এদিন আমতা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতির এমন মোটরসাইকেল শোডাউনের কারণে সড়কে চলাচলকারী সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তিতে পরেন। গ্রামের ছোট রাস্তা গুলোতে শতাধিক মোটরসাইকেল নিয়ে শোডাউন দেয়ায় সাধারণ মানুষের চলাচল কিছু সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। এতে সাধারণ জনগণের কাজে বিঘ্ন ঘটে। কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্দেশনা অমান্য করে মোটরসাইকেল শোডাউন করায় ধামরাইয়ে বিএনপির একাধিক নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং দলীয় নির্দেশনা অমান্য করায় জোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা বিএনপির এক নেতা বলেন, দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে তার মোটরসাইকেল শোডাউন করা উচিত হয়নি। কেননা দলের নেতারাই যদি নির্দেশনা না মানে কিংবা মানতে উদ্বুদ্ধ না করে তাহলে কর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না। এ বিষয়ে দলীয় হাইকমান্ডের পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করি। ধামরাই উপজেলার আমতা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোঃ আতিক বলেন, আমি আজই শুনেছি বিষয়টি। সে দলের মতাদর্শের বাইরে কাজ করছে। সে আসলে দলের দিকনির্দেশনা না মাইনা কাজ করে। এর আগেও দলীও শৃঙ্খলা অমান্য করে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচন করেছে। অনেকেই তার এই সব বিষয়ে অভিযোগ দিয়েছে। সে আসলে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে এসব কাজ করে। অভিযুক্ত আমতা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম খান লাবু বলেন, শুক্রবার (২২ নভেম্বর) জুম্মা নামাজের পর শতাধিক মোটরসাইকেল নিয়ে পুরা আমতা ইউনিয়নে শোডাউন দিয়েছি দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা যেনো ভালো থাকে সেই জন্য। তবে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা আমি জানতাম না। এবিষয়ে অবগত থাকলে আমি মোটরসাইকেল শোডাউন করতাম না। ধামরাই উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আলিম (মাস্টার) বলেন, এবিষয়ে আমাদের কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি এখনো। আমাদের উপজেলা বিএনপির সভাপতি আছেন তমিজ উদ্দীন তাকে বিষয়টি জানাই দেখি ওনি কি করেন। এবিষয়ে ধামরাই উপজেলা বিএনপির সভাপতি আলহাজ্ব তমিজ উদ্দীনের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক বলেন, কেন্দ্রীয় ভাবে নির্দেশনা দেয়া আছে যে মোটরসাইকেল কিংবা গাড়ি দিয়ে কোন শোডাউন দেয়া যাবে না। নির্দেশনা অমান্য করে মোটরসাইকেল কিংবা গাড়ি দিয়ে কোন শোডাউন করলে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। এটা কেন্দ্রীয় ভাবে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। ওনি যেহেতু ইউনিয়নের সভাপতি সেহেতু আমি উপজেলা নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়ে দিবো যেনো এই বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হয়। প্রসঙ্গত, দেশের চলমান পরিস্থিতিতে দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে গত সেপ্টেম্বরের ৮ তারিখেবিশেষ বার্তা দেন বিএনপি।
সেখানে মোটরসাইকেল বহর বা অন্য কোনো যানবাহনের শোডাউন পরিহার করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, এতদ্দ্বারা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং এর সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ সংশ্লিষ্ট সবার অবগতির জন্য নির্দেশক্রমে জানানো যাচ্ছে যে, আপনাদের অধিনস্থ কোনো ইউনিটে সাংগঠনিক কাজের উদ্দেশ্যে সফরকালে কোনো ধরনের মটরসাইকেল বহর ও কারসহ অন্য কোনো যানবাহনে শোভাযাত্রা পরিহার করতে হবে।